
শেরপুর প্রতিনিধি:
সমাপনী খ্রিস্টযাগের (মূল প্রার্থনা) মধ্যদিয়ে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বারমারী সাধু লিও’র ধর্মপল্লীতে শেষ হয়েছে দু’দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত ফাতেমা রাণীর ২৭ তম বার্ষিক তীর্থ। ‘আশার তীর্থযাত্রী, ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ মুল সুরের ওপর ভিত্তি করে এই তীর্থে যোগ দেন প্রায় ৩০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টভক্ত। তীর্থ উদযাপন কমিটি সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকাল ৩ টায় পুর্ণমিলন ও পাপ স্বীকার, ৪ টায় পবিত্র খ্রিস্টযাগ, রাত ৮ টায় আলোক শোভাযাত্রা, রাত ১১ টায় সাক্রামেন্তের আরাধনা ও রাত ১২ টায় নিশিজাগরণ অনুষ্ঠিত হয়। এই তীর্থে খ্রিস্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ নিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মাদার ম্যারির ৫৫ ফুট উচু প্রতিকৃতির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে ফাতেমা রাণীর প্রতি ভক্তি শ্রদ্বা জানান ও তার সাহায্য প্রার্থনা করেন। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ৮টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও বেলা ১২ টায় সমাপনী খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থোৎসবের সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এই বারের তীর্থ উৎসবে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভ্যাটিকান সিটির এম্বাসেডর ও পোপের বিশেষ প্রতিনিধি আর্চবিশপ কেভিন রেনডাল। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি।খাগড়াছড়ি থেকে তীর্থে আসা জুয়েল ত্রিপুরা বলেন, আমি প্রথমবারের মতো এখানে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। রাজশাহী থেকে আগত তীর্থযাত্রী রোজিনা চাম্বুগং বলেন, এখানে ভক্তরা মনের আশা পূরণের জন্য এবং অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করেন। এতে তাঁদের মনোবাসনা পূরণ হয়। মুক্তাগাছা থেকে আসা কারিশমা চাম্বুগং বলেন, মারিয়ার কাছে এলে মনে এক ধরনের শান্তি পাই। আমরা এখানে প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি। তীর্থ উৎসবের সমন্বয়কারী ও সাধু লিও’র ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত রেভারেন্ট ফাদার তরুণ বনোয়ারী বলেন,এই তীর্থস্থানটি পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরনে ১৯৯৮ সালে স্থাপন করা হয়েছে। সেই সময় থেকেই ফাতেমা রাণীর করুণা ও দয়া লাভের আশায় সারাদেশ থেকে তীর্থযাত্রীরা এখানে সমবেত হয়ে নিজেদের পাপ মোচনের জন্য প্রার্থনা করেন। এ বছর সারাদেশের ক্যাথলিক খ্রিস্টভক্তরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থ পালন করেছেন। আমরা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় শান্তিপুর্ণভাবে তীর্থ অনুষ্ঠান শেষ করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তীর্থের সার্বিক বিষয়ে শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, এই উৎসবে সতর্কতা ও শতভাগ পেশাদারত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করেছেন সকল বাহিনীর সদস্যরা। চার স্তরের নিরাপত্তা বিধানে সাদাপোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ছিল। এদিকে তীর্থোৎসবের পাশেই জমজমাট মেলা বসে। মেলায় আদিবাসীদের বিভিন্ন পরিধেয় বস্ত্র, আসবাবপত্র, শো-পিস, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদির স্টল বসে।